,

শহরে টমটমে উঠানামার ভাড়া ৫ টাকা বহাল চান যাত্রীরা :: তালিকা না থাকায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে চালকরা

জুয়েল চৌধুরী : এক সময়ের যানজটহীন হবিগঞ্জ শহরে এখন ভোগান্তির আরেক নাম হচ্ছে ‘যানজট’। এর প্রধান কারণ হলো, ‘অনিয়ন্ত্রিত’ ব্যাটারি চালিত টমটম আর অটোরিকশা। একটি শহর পরিকল্পনামাফিক গড়ে উঠবে এটাই প্রত্যাশা করেন পৌরবাসী। অথচ শহরে অনিয়ন্ত্রিতহারে বেড়ে চলেছে তিন চাকার এ যানবাহনগুলো। ফলে হবিগঞ্জ শহরের অলিগলি, ব্যস্ততম সড়ক, গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে যানজটের জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এক সময়ে চলাচলে সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হিসেবে টমটমের পরিচিতি থাকলেও এখন শহরবাসীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে! স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে অভিভাবক, কর্মজীবী-অফিসগামীসহ সাধারণ যাত্রীরা সবাই এসব চালকদের আচরণে ক্ষুব্ধ। বিশেষ করে ভাড়া নিয়ে।
হবিগঞ্জ পৌরসভা সুত্রে জানা যায়, পৌরসভায় অনুমোদন পাওয়া টমটমের সংখ্যা ১৩শ’টি। তবে বাস্তব পরিসংখ্যান বলছে বৈধ এবং অবৈধ মিলিয়ে এর সংখ্যা ৫/৭ হাজারের ওপরে। যার দুই তৃতিয়াংশই চলাচল করছে শহরের প্রধান ও ব্রেকরোডসহ বিভিন্ন সড়কে। যদিও ইতোমধ্যে বৈধ এবং অবৈধ টমটম চিহ্নিত করতে হবিগঞ্জ পৌরসভা অনুমোদিত টমটম গুলোতে হলুদ রঙ করে দিয়েছে। কিন্তু নিয়মিত তদারকি না করার কারণে তা কাজে আসেনি। ইউনিয়নের টমটমগুলোও হলুদ রঙ করে শহরে চলাচল করছে। এছাড়া এসব যানবাহনের অর্ধেকের বেশি চালকদের কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ নেই।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বছর করোনার কারণে এবং শহরের প্রধান সড়ক সংস্কারের অজুহাতে টমটমের কতিপয় চালক উঠানামার ভাড়া ১০ টাকা করে নেয়। এ নিয়ে প্রতিদিন শহরে যাত্রীদের সাথে হাতাহাতি, মারামারি, বাকবিতণ্ডা চলতে থাকে। স্থানীয় মিডিয়ায় এ নিয়ে সংবাদ হলে উদ্যোগ গ্রহণ করে পৌরসভা।
শহরজুড়ে মাইকিং করে জানানো হয়, শায়েস্তানগর বাজার পয়েন্ট ও পৌর বাস টার্মিনাল পয়েন্ট থেকে চৌধুরী বাজার পর্যন্ত গেলে একজন যাত্রীকে ১০ টাকা ভাড়া দিতে হবে। এ ছাড়া শহরের যেকোনো স্থানে উঠে নেমে গেলে পূর্বের ৫ টাকা ভাড়াই বহাল থাকবে। পৌরসভার মাইকিংয়ের পর অনেকদিন অতিবাহিত হলেও নতুন বছরের শুরুতে আবারও ভাড়া বাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে টমটম মালিক ও চালকরা। তারা উঠানামার ভাড়াও ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা করতে চায়। যাত্রীসেবার কথা চিন্তা না করে উঠানামার ভাড়াও অনেক চালক ১০ টাকা করে নেয়া শুরু করে। অথচ পৌরসভার মাইকিং অনুযায়ী শায়েস্তানগর বাজার অথবা সিএনজি স্টেশন থেকে মোদক ফার্মেসি পর্যন্ত এবং বেবিস্ট্যন্ড থেকে পেছনের সড়ক দিয়ে বৃন্দাবন কলেজ হোস্টেল পর্যন্ত ৫ টাকা ভাড়া হবার কথা থাকলেও চালকরা নিজেদের মর্জিমতো ১০ টাকা করেই আদায় করে। নারী যাত্রীরা নিরূপায় হয়ে দিলেও পুরুষ যাত্রীদের সাথে শুরু হয় ফের বাকবিতণ্ডা, হাতাহাতির ঘটনা। কিন্তু এসব সমাধানে কেউ এগিয়ে আসেনি।
সর্বশেষ গতকাল সোমবার ২৭ ফেব্রুয়ারি যানজটমুক্ত শহর গড়ার প্রত্যয় নিয়ে হবিগঞ্জ পৌরসভা মাঠে সমাবেশের আয়োজন করে পৌর টমটম মালিক ঐক্যপরিষদ। এসময় তারা ৮টি দাবি তুলে ধরে। যার মধ্যে উঠানামার ভাড়া ৫ টাকার স্থলে ১০ টাকা করার দাবিও ছিল।
সাধারণ যাত্রীরা জানান, ৭-৮ বছর আগে যখন শায়েস্তানগর বাজার থেকে চৌধুরী বাজার পর্যন্ত ৫ টাকা করে নেয়া হতো তখন শহরে এতো টমটম ছিলো না। এখন সময়ের সাথে যন্ত্রাংশসহ সবকিছুর দাম যেহেতু বেড়েছে সেক্ষেত্রে চালক-মালিকদের কথা চিন্তা করে শায়েস্তানগর বাজার থেকে চৌধুরী বাজার পর্যন্ত ভাড়া ১০ টাকা করা হয়েছে গত করোনার সময়ে। আর শহরে নিয়মিত টমটমে যাতায়াত করা যাত্রীদের সুবিধার্থে উঠানামা ৫ টাকা বহাল রাখা হয়। কিন্তু নতুন বছরের শুরুতে এসে এটিও মানছে না চালকরা। যাত্রীদের কথা চিন্তা না করে তারা উঠানামার ভাড়াও ১০ টাকা করতে চাইছে।


     এই বিভাগের আরো খবর